রাতকাহিনী / সুষ্মিতা রায়চৌধুরী
সেই তখনের কথা।
তারাখসে পড়তেই,সিঁদুর আলপনায় নিকনো উঠোন।সযত্নে সাজানো তুলসীমঞ্চ।
সখ্যতা রোজ তখন প্রদীপের শিখায়।শাঁখের আওয়াজে আলোকিত অন্ধকার।
কাজল চোখ পলক তুলতেই,আমি আরও উজ্জ্বল।
দরজায় খিল তোলে নতুন রান্নাবাটির সংসার।
আজ সারা রাত গল্প আঁকবে টালির
চাল,মাটির বারান্দা আর সঙ্গ দেবে সলতেকথা।
অমাবস্যায় কলঙ্কিনী হয় রূপকথারা।রাত বাড়ে।
ঘুমিয়ে পড়ে গল্পকথারা।রানার দেখতে পায় দূরে খোলা জানলায় তখনও জ্বলছে
সাঁঝবাতি ,কাচের লন্ঠনের আলিঙ্গনে।
নিভুনিভু চোখে কুঁড়েঘর তখন রাজপ্রাসাদ।
কিন্তু এখন....।
ঝুপ করে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
ঘড়িতে তখন রাত এগারোটা ।
কতোগুলো বছর কেটে গেছে, নতুন আসবাবপত্র এলেও বুড়ো ঘড়িটা আজও বেজে চলেছে , সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ।
আদি অনন্ত,ক্ষয়হীন .....
নীল দেওয়ালে এক মুঠো শিউলি ফুল !
রঙ তুলিতে প্রাণহীন ...
কিছুক্ষণ আগের সব হাসি কান্না গল্প শেষ, ফাঁকা চেয়ার দুটোয় এখনও শালটা
পরে আছে ...
কেমন আরেকটা দিনের অবসান...
কাছিমের শ্লথ গতিতে নয়, এক নিমেষে স্মৃতি হয় মুহূর্ত !!
ঘড়ির কাটায় বারোটা ...
আনচান করা চোখদুটো বারবার মুঠোফোনের স্ক্রিনে।
অনেক মেসেজের ভিড়েও একটা নামের অপেক্ষা ।
কিন্তু না, গ্রহণের মায়াজালে পূর্ণিমা রাত...
শোনা যায় শুধু ঘড়ির কাটার আওয়াজ,
এগিয়ে চলে রাত, দুটো বাজলো শহরের বুকে ...
পাড়ার রকের ছেলেটা রাতের প্রহরী ,
হঠাৎ কি তারা খসে পড়লো আকাশে....
নামটা ভেসে ওঠে, হৃৎস্পন্দনে জেগে ওঠে অলস রাত্রি ....
এক ঝাঁক জোনাকি সাজিয়ে দেয় স্বপ্নের ফুলসজ্জা ...
দুটো মন, এত কথা, ছুঁয়ে যায় ভালো থাকা !!
বুড়ো ঘড়ি জানে সময় এখানে স্থির।মিনিট , ঘণ্টা কেটে যায়....
চোখ বুজে আসে সম্মতির শান্তিতে ।
অন্ধকার চাদরে কোথাও ভোর চারটে....
বালিশ ভিজে যায় অসহায় আবদারে,
অব্যক্ত অভিমানে কান্নাচাপা নিস্তব্ধ প্রতিবাদ...
সোনাকাঠির ছোঁয়ায় হারিয়েছে লুকানো ডাকনাম ।
ডাকপিয়নের ছোঁয়ায় ভোরের আলো,
ডাল ভাতের রোজনামচায়,রাত্রির অবসান .........
মনের গভীরে ঘুমিয়ে থাকবে প্রথম প্রেম,অ্যাসট্রের পোড়া সিগারেটে “বেকার” কবিতা,
ঘড়ির কাটায় সবার অগোচরে লেগে থাকবে কপালের দাগে মৃত প্রলেপ ।
জলছবিতে আশার আলো,
তখন-এখনের ক্যাকাফোনে সতেজ থাকবেই মনের আপন চেনা রজনীগন্ধা ।
(সমাপ্ত)
কোন মন্তব্য নেই