মুখবন্ধ / সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
যদি আজ আলোর মুখ বন্ধ হয়ে যায়
এই নিয়ন বাতির মুখ থেকে ঠিকরে পড়া আলো
জানালায় আছড়ে পড়া হাওয়া
সুনসান রাস্তায় ডেকে চলা কুকুর
জঙ্গলে জঙ্গলি শেয়ালের হুক্কাহুয়া
সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়
তবে নিম্নলিখিত গুলির মুখবন্ধ লিখতে পারি আমি-
ততক্ষণ তোমরা একটু মুখ বন্ধ রেখে পা চালিয়ে হাঁটো।
জন্মের মুখ
উনিশশো সালের কোনও এক বছর
বার মাসের একটা মাস। ত্রিশ দিনের একটা দিন।
জন্মদিন পালন হয় না। বাধা ছিল।
একটা মোমবাতিও নেভেনি কোনও বছর
তবে কোনও এক দিন পায়েস রেঁধে দেন মা
আমি কাঁসার বাটিতে জন্মের ভাত মুখ দেখি।
ভালবাসার মুখ
ভালবাসার কোল পেয়েছি অনেক
আম জাম কাঁঠাল তলা, আখের ক্ষেত
লুকিয়ে নিয়ে যেত দুপুর দিদিরা
মাঠের আড় ভেঙে ছুটে আসত ভালবাসার মুখ
আমার মুখে ওড়না রেখে দু মুখ এক হয়ে যেত।
সহিষ্ণুতার মুখ
দেখেছি ঘর ময় গিজ গিজ করছে লোক
এছাড়াও আসা যাওয়া আত্মীয় স্বজন
উঠোনে মাটির উনুন, আর ফুঁকনলে
কালো হয়ে যাওয়া সহিষ্ণুতার মুখ।
ক্লান্তির মুখ
রক্ত মাংসের মানুষ। অফিস, আদালত
চৌষট্টি চোরের বুদ্ধি। পাকড়াও
বাজেয়াপ্ত মালের হিসেব। চালান
রাত দুপুর চোর পুলিশ চোর পুলিশ
তবু ঘোড়াচাপা পিঠ আর প্রশান্তির
এক টুকরো ক্লান্তির মুখ।
ছায়ামূর্তির মুখ
কয়লার আগুন লোহার বগি
পাথুরে বুকে সমান্তরাল চাকা
ধোঁয়া উড়িয়ে গ্রাম থেকে শহর
বাতাসে ছায়ামূর্তির মুখ,
এক অকাল মৃত্যুর হাত পা।
পোশাকের মুখ
এখনো কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছি
খাটে শুয়ে আছে শীতল ক্লান্তির মুখ
তাকে জড়িয়ে সহিষ্ণুতার মুখ
খাকী পোশাকের তারায় স্বপ্ন হারাচ্ছে।
ছোবলের মুখ
মাথার মনি নিষ্প্রভ হলে
সাপেরাও খোলস ছাড়ে
গর্ত ভাগ হয়, মাঠ থেকে ঢিবি
বিষাক্ত ছোবলের দাগ রেখে যায়
আত্মীয়, স্বজন।
গোধূলির মুখ
আলোর মুখ বন্ধ হয়ে আসছে
অস্তরাগের শেষ ছটা
বিদায় জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে
গোধূলির মুখে হরিনাম
ফিরে আসার বোল তুলছে না।
রুটির মুখ
গোল গোল ঘুরছি
এক পাক দু পাক তিন পাক
রুটি আঁকছে জলের দাগ
হাড়ি ভাঙার শব্দে নিভে যাচ্ছে উনুন।
মুখাগ্নির মুখ
মুখ দেখতে পাচ্ছি না
আগুন আর মুখের স্পর্শ অনুভব করছি
জন্মের মুখ, ভালবাসার মুখ, সহিষ্ণুতার
মুখ
ক্লান্তির মুখ, ছায়ামূর্তির মুখ, পোশাকের মুখ
ছোবলের মুখ, গোধূলির মুখ, রুটির
মুখ
আর পিতৃপুরুষের মুখবন্ধ মুখ।
অলঙ্করণ- সঞ্জীব
বিভিন্ন মুখের কবিতা পেলাম । ভালবাসার মুখ আর সহিষ্ণুতার মুখ খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন