Header Ads

1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5

একটি অসমাপ্ত গল্প / ইকবাল তাজওলী

‘আমার মেওয়া নামার কথা কিন' ভুলক্রমে দুবাগ নেমে গেলাম। এই তুমার ধর, এক মাইল আগে, তারপর ........।’
মতিয়ার বিরতিহীন গাড়ির পেছনে বসে মারফত আর আতিয়ারকে এক নাগাড়ে তার অভিজ্ঞতার কথা বলে যায়। মারফত আর আতিয়ার মতিয়ারের দেশের লোক হলেও তাদের সঙ্গে তার কালে-ভদ্রে দেখা হয়। কারণ মারফত আর আতিয়ার সিলেট শহরে থাকলেও মতিয়ার থাকে গোলাপগঞ্জে, ফরিদপুরের লোকদের সঙ্গে।
ভাড়া নিয়ে পেসেঞ্জার-কন্ডাক্টরের চিৎকার -চেচামেচিতে তারপরের ঘটনা আর বলা হয় না। সিলেট -চারখাই র্বটের ভাড়া আটাশ না ত্রিশ তাই নিয়ে দফারফা হতে হতে মিনিট দশেক চলে যায়। শেষ-মেষ পকেটে হাত ঢুকিয়ে কন্ডাক্টর দুটাকা বের করে দিয়ে দিলে পরিসি'তি শান্ত হয়।
কন্ডাক্টর মতিয়ারের দিকে এগিয়ে আসে। আসতে আসতে ‘ কঞ্জিশোর বাইচ্চা ’ বলে একটা গালি দিয়ে দিতেই পেসেঞ্জারটি আবার বিগড়ে যায়। বিগড়ে গিয়ে কন্ডাক্টরের সার্টের কলার ধরে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে এক ঘা বসিয়ে দেয়। মারমুখো পেসেঞ্জারটির সঙ্গে কন্ডাক্টর পেরে উঠতে পারে না। রণে ভঙ্গ দেয়।
তারপর আপন মনে বকবক করতে করতে শান্ত হয়।
ভাড়া আদায় করতে করতে কন্ডাক্টর আবার মতিয়ারের দিকে এগিয়ে আসে। জিজ্ঞেস করে,‘দেশি, কানো যেইতায় ? বাড়া দেও।’
এদিককার জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার-বারইগ্রাম লাইনে ফেরিওয়ালারা কন্ডাক্টরদের কাছে দেশি নামে পরিচিত। মতিয়ার ‘দুবাগ বলে পঁচিশ টাকা এগিয়ে দিয়ে আবার তার অভিজ্ঞতার কথা বলে যায়।
‘বুইছ, মাসখানেক আগেও মেওয়ায় আসিছি তাও ভুল হয়া গেল। তারপর দিলাম হাটা। বামের রাস্তা ধরে সোজা মাইল দেড়েক হাটার পর একদল চ্যাংড়াকে পালাম। তাস পিটাচ্ছে। কলাম, মেওয়া । সুমুন্ধিরা বামদিকের রাস্তা দেখিয়ে দিল।’
মতিয়ার বলে যায়।
বিরতিহীন ততৰনে শেওলায় এসে দাঁড়িয়েছে। পেসেঞ্জারদের গলা আবার শোনা যায়। কন্ডাক্টর কোন উত্তর করে না । একজন বিরক্তিতে বলে ওঠে , ‘ফেলেগ নামাইয়া গাড়ি চালাও। বালোর বিরতি।’
‘বুইছ, তখন জেদ উঠে গেছে, ঘুরে-ফিরে সুমায় নিয়ে হলেও মেওয়া যাতি হবে। কথা দিয়ে আসিছি। দিলাম হাটা। হাটতে হাটতে এক প্রাইমারি স্কুলের সামনে মুদি দোকান পেয়ে দাঁড়ালাম। ভাদ্রের তালপাকা গরম পড়িছে। গাট্টি নিয়ে হাঁপায়া উঠছি। মিনিট দশেক জিড়িয়ে নিয়ে দোকানদারকে কলাম, ভাই, খাবার পানি দেন। খাই। দোকানদার পানি বের করে দিল। তারপর কলো, ‘মসিদোর পিছের বাড়িত যাও। শাড়ি কিনব। দেখিও , মসিদোর লগোর পথ দিয়া যাইও।’
‘পানি খেয়ে ভাবলাম, আসি যখন পড়িছি, দুয়েকটা শাড়ি বেচা-বিক্রি করে যাই। মসজিদের কাছে গিয়ে দেখি, কাদা। আর পানি। মনে হয় রাতে বৃষ্টি হয়েছে। মেজাজ গেল বিগড়ে । কী এক ফাঁপড়ে পড়লাম। কুন কুষাইতার মুখ দেখে বের হইছলাম, আলৱা জানে ! একটু পেছনে এসে ছোট্ট একটা মাঠ পেরিয়ে এক বাড়ির সামনে এক মেয়েছেলেকে পালাম। কলাম, আপা মেওয়া। আর কতি হলো না। জবাব শুনে তো চৰু চড়ক গাছ ! কলো, ‘ইটা তো ইন্ডিয়া । তুমি বাংলাদেশোর কতা কইতরায়। আমার বাড়ি ও বাংলাদেশ। বড়লেখা । ইনো আমার বিয়া অইছে। আও, আমার লগে।’ তারপর সামনের দুই বাড়ির ভেতর দিয়ে তার বাড়ি নিয়ে কলো, ‘যাও,ওউ বাড়ি ঢুকি যাও। ই বাড়ি ইন্ডিয়া আর ওউ বাড়ি  বাংলাদেশ; ওউ বাড়ির পাকঘর ও ইন্ডিয়া । অসুবিধা অইতো না, আমি কইয়া দিয়ার।’
মতিয়ারের আর বলা হয় না। বিরতিহীন তখন জিরো পয়েন্ট থেকে পেসেঞ্জার তুলে দুবাগ এসে দাঁড়িয়েছে। কন্ডাক্টর ‘দুবাগ-দুবাগ’ বলে আওয়াজ দিয়ে উঠলে মতিয়ার নেমে যাওয়ার জন্যে উঠে যায়। ভিড় ঠেলে নামার জন্যে অগ্রসর হতেই আগের পেসেঞ্জারটি আবার তীব্রভাবে জ্বলে উঠে।
ড্রাইভার এবার দেরি করে না। গাড়ি অকস্মাৎ ছেড়ে দেয়। দরজার কাছে আসা মতিয়ার ভারসাম্য রৰা করতে পারে না। ছিটকে নিচে পড়ে যায়। সেই সময় পেছন থেকে তীব্রভাবে ধেঁয়ে আসা  বাস মতিয়ারকে চাপা দেয়।
বিরতিহীন তখন একশো কিলোমিটার বেগে মেওয়া অতিক্রম করছে।



        গল্পটির প্রথম প্রকাশঃ ১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১২, যুগান্তর পত্রিকা, বাংলাদেশ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.