মুদ্রার দুই পিঠ / শর্মিষ্ঠা ঘোষ
তারপর দুজনেরই জমে থাকা কথা ফুরিয়ে এল আর গল্পের নটে মুড়িয়ে খেল দুষ্টু প্রেমের ছাগল , সব এভাবে শেষ হতে দেওয়া ঠিক নয় । এখানে এক্স এবং ওয়াই এর যদিও কোন বৈধ সম্পর্কের ছাড়পত্র প্রাপ্ত ছিল না যে কোন আহা উঁহু বরাদ্দ থাকবে সেই ভাঙ্গা কপালের বরাতে । আমি মামুলি তৃতীয় ব্যক্তি , তৃতীয় নয়ন দিয়ে সেই পরিণতি দেখেছিলাম আগেই , কিন্তু অশরীরী বলে সাবধান করতে পারিনি( মিথ্যে বলবনা , বিনি পয়সায় সিনেমা দ্যাখার সুযোগটাও বেশ লোভনীয় ) … সেবাদে আগুপিছু ধারাবিবরণীটাই দিই বরং । তারপর তো এক্স ফিরে এল তার প্রবাস থেকে পূজোর ছুটিতে , ভরা সংসারে ফিরে এলো তার একেলাপন থেকে ,হর সন্ধ্যে তার মধুশালার আড্ডা থেকে , দেরী করে ঘুমভেঙ্গে কোনমতে স্নান সেরে খালিপেটেই অফিস দৌড়নোর সকাল থেকে, অফিসের পথটুকু অটোতে যেতে যেতে সহযাত্রীদের কাঁচকলা দেখিয়ে মাতৃভাষায় ওয়াই এর সাথে প্রেমালাপ চালানোর রুটিন থেকে , কাজের ফাঁকে লুকিয়ে ফেসবুকে চ্যাট থেকে , অফিস শেষে ফিরতি পথে ক্লান্তির খতিয়ান উজার করে কিম্বা জ্বর হলে মাথা ব্যাথায় ওয়াই এর কাছে আরাম চাওয়ায় থেকে । একই সাথে ফুরলো গভীর রাতে মদের ঘোরে ওয়াই এর কাছে নিজের পুরনো প্রেমিকার সাথে শেষ সঙ্গমের বর্ণনা থেকে শুরু করে ছোটবেলায় বাবার খুনে মায়ের হাত থাকার ইতিবৃত্ত , মায়ের বিরুদ্ধে করা
দাদার মামলার কথা , মায়ের তথাকথিত প্রেমিকের কথা , মায়ের ইদিপাস কমপ্লেক্সের শিকার হবার কথা , সেই বাস্তব আর লজ্জা থেকে পালাতে বাংলা মদে আশ্রয় নেবার কথা ,সেই থেকে যৌন শীতলতা , সমুদ্রমুখি গরাদ হীন জানালায় বসে বৃষ্টি দ্যাখার কথা , সারাদিন মদ খেতে খেতে ওয়াই কে ফোন আর এস এম এস করা। শেষ হলো মাঝরাত্তিরে ঘুমন্ত সংসার ফেলে ওয়াই এর সেসব শোনা , সান্ত্বনা দেওয়া , আরও আরও মায়ায় জড়িয়ে পড়া এক লন্ড ভন্ড বাউন্ডুলের জীবনের সাথে । দুজনেরই মনে হচ্ছিলো এই বন্ধন এই জীবনে ঘুচবার নয় । মনে হচ্ছিলো বলেই বাড়ি ফেরার পথেও গোটা দুদিনের রাস্তা জুড়ে চলেছিল ওদের ফোনালাপ । তারপর এতদিনের প্রবাস জীবনের সমস্ত কললগ আর মেসেজ বক্স ডিলিট করে এক্স তো ঢুকে গেল তার বাড়িতে । সেখানে বৈধ বউ আছে অপেক্ষায় । অনেকদিন বাদে বাড়ি ফিরে এক্স এর সেদিন খাবার থালায় আর রাতের বিছানায় যুগপৎ মাংসের সুবাস । কথক ঠাকুর এর পর আর কি বলবে ? এখান থেকেই শুরু হল তাদের নতুন যাপন , ওয়াই ফ্যাক্টর কে মুহূর্তের ভুল আর মোহ বলে মেনে নেওয়া , ফোনের সিম বদলে ফেলা ( অন্য রাজ্যে এলে এটা করতেই হয় , তাই দোষের নয় ) , বউ আর একলা থাকতে পারছে না তাই এক্স এর এই দূর দেশের চাকরিটা ছেড়ে দেওয়া , এই শহরেই ফিরে যাওয়া তার পুরনো প্রেমিকার কাছে , ঐ যে যার কথা বলতে গিয়ে ওয়াই কে একদিন বলেছিল , ‘আর কখনো ফিরে যাব না , প্রেমহীন দেহবাদে ’। এভাবেই শুরু হল একটা চিরাচরিত ছকের গল্প , যে গল্পে ওয়াই স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে যাবে , পি সি সরকারের আব্রাকা ডাব্রা গিলি গিলি গে র মত ... এ আর বলার কি আছে তবে ? আছে বাওয়া , আছে । এই যে ফেসবুক খুল্লেই খালি দুষ্টু ছলনাময়ী প্রেমিকা সংবাদ দ্যাখে কথক ঠাকুর , সেখানে একবার ক্ষীণ একটা একজাম্পল সাইট করা আর কি , মুদ্রার দু খান পিঠ ই ছড়াতে ওস্তাদ, যদি সুযোগ থাকে , হা হা ... এক্স তার নেক্সট শিকারের কাছে ওয়াই এর গল্প করবে , কিন্তু ওয়াই নাকে কানে খত দিয়ে হাতে তুলে নেবে লক্ষ্মীর পাঁচালী , ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে...’ ইত্যাদি ইত্যাদি ...
চমৎকার লাগলো। ঝরঝরে...
উত্তরমুছুন