Header Ads

1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5

জয় চক্রবর্তী

বগগা ভোঁ কাট্টা

জানলা জোরা আকাশে অন্ততও ছ-সাতটা ঘুড়ি উড়ছে । অশেষ নজর রাখছে প্রত্যেকের গতিবিধির ওপর । যদিও লাল হলুদ বগগার ওপর একটু বিশেষ নজর । আসলে উড়ছে সবাই কিন্তু বগগাটার চাল চলনে একটা রাজকীয়তা আছে । নীল সবুজ চাঁদিয়াল টা দেখতে সুন্দর হলে কি হবে , বগগার একটা বাঁ হাতি গোত্তায় --- ভোঁ কাট্টা । অশেষ দেখতে দেখতে বগগার ফ্যান হয়ে গেলো ।
জানলা থেকে অশেষের চোখ গেলো পাশের টেবিলটার দিকে ।  কাল কত লোক এসেছিল সন্ধ্যাবেলা  , এমনকি পালানও ওর বাবা মার সঙ্গে । সবাই কত কি উপহার এনেছে ওর জন্য --- বড় বড় চকলেট , ভিডিও গেম , প্রচুর ফল --- আরও অনেক কিছু । পালান পাঁচটা ঘুড়ি এনেছিল , টেবিলে রেখে বলল “এই দ্যাখ ! তোর ফেভারিট দুরঙ্গা বগগা !” কিন্তু কেন ? কাল তো বার্থডে ছিলনা । তবে টেবিল ভরা এত উপহার কেন ? হঠাৎ জানলার দিকে নজর যেতেই উঠে বসে অশেষ । লাল হলুদ বগগাটা অনেকটা নিচের দিকে নেমে এসেছিল । আস্তে আস্তে ডাইনে বাঁয়ে কান্নিক খেয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল । আচমকা হু-হু করে ওপর দিকে উঠতে লাগলো । ঠিক , যা হয় তাই হল , একসঙ্গে দুটো নিশ্চিন্তে উড়তে থাকা পেট-কাটি ভোঁ ! উত্তেজনায় হাততালি দিয়ে উঠল অশেষ , শাবাশ বগগা , শাবাশ !
ওফ ! আবার – আবার মাথার পেছন দিকে চিনচিনে ব্যথাটা শুরু হল । এই ব্যথাটাকে খুব ভয় পায় অশেষ । এটা বাড়তে বাড়তে অসহ্য যন্ত্রণার রুপ নেয় , চারদিকটা অন্ধকার হয়ে যায় , কোথায় যেন তলিয়ে যেতে থাকে । ব্যথাটা ভোলার জন্যই আবার জানলার দিকে মন দিল অশেষ । আকাশে আর তিনটে ঘুড়ি অবশিষ্ট --- দুটো তেরঙ্গা আর ওর বগগা । অশেষ একটু স্বস্তি পায় । ওর বগগাকে বাঁচতে হবে । হ্যাঁ ! বগগা যেন ওর কথা শুনতে পেল । মুহূর্তে ডানদিকে গোঁত্তা খেয়ে ঢুকতেই একটা তেরঙ্গা আউট ! বগগা আবার নড়ে চড়ে স্থির ।
মাথার ব্যথাটা বাড়ছে ।  অশেষ চোখ বুজে বিছানায়  এলিয়ে পড়ে । মনে হচ্ছে  একটা আলট্রা সনিক সাউন্ড যেন দুই কান দিয়ে ঢুকে সারা মাথায় অ্যানাকোনডার মত বেয়ে বেড়াচ্ছে । অশেষ জানল না , শেষ তেরঙ্গাটাকেও কেটে বগগা এখন আকাশের মালিক । সারা আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে । গম্ভীর স্বরে মেঘ ডাকছে । বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে । বগগা নিজের খেয়ালে খেলে বেড়াচ্ছে আকাশময় । বগগা কি পারবে --- পারবে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে ?
কে যেন ডাকল অনেক দূর  থেকে । একটু একটু করে চোখ  মেলল অশেষ । চারপাশটা কেমন ধোঁয়ায় ভরে গেছে । সাদা পোশাকে দাঁড়িয়ে ও কে ? মা তো নয় , পালানও নয় , তবে কি অমলের সেই দইওয়ালা ? আস্তে আস্তে ধোঁয়াটা কাটছে । সিস্টার এসেছেন ওকে নিয়ে যেতে --- অপারেশন টেবিলে । অশেষের মাথার ভেতরে যে আগুনের বলটা আছে , তার তো কিছু করা দরকার । ওর বাবা মা , আত্মীয় স্বজন , এমনকি পালানও জানে --- আজই হয়ত বগগা ভোঁ কাট্টা ।
________

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.