অতঃ সারমেয় কথা / রাজিত বন্দোপাধ্যায়
১
আচমকা ভীড়ে ধাক্কা খেয়ে আমার দেহটা ফুটপাতের পাশের নালায়
পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। যার সঙ্গে কলিশন টা হয়েছিল সে ফুটপাত লাগোয়া আখরোট দোকানে
ঝুঁকে পড়েছিলেন।
সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম ।
আমার বিস্মিত মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল , " গুলফাম স্যর !
" জুলজুল চোখে খানিক চেয়ে থেকে সেই পরিচিত রস সিঞ্চিত স্বরে বললেন ,
" বচ গয়ে মুন্নু । অভিতক তো দো চার হাথ হো জাতা ভাই। " ওর
সেই সরল কথায় হেসে ফেললুম।
দোষটা আসলে আমারই। সবেমাত্র শ্রীনগরে পোঁছেছি। উঠেছি
রেসিডেন্সি রোডের আমার সেই পরিচিত পছন্দের হোটেল আদুসের দ্বিতলে। অনেক দিন পরে আসা
। কাজের চাপে এসেই বেরিয়ে পড়েছিলাম লাল বাগের উদ্দেশ্যে। মাথায় একরাশ চিন্তা
উদ্রেককারী প্রশ্ন এলোমেলো ছুটে বেড়াচ্ছে । এবার হাতে বিশেষ সময় নেই। তাই চিন্তায়
ভাবনায় আকুল হয়েই পথ চলছিলাম ।
চোখের দিকে চেয়ে মনে হল গুলফাম স্যর চিন্তিত । কথাটা জিজ্ঞাসা
করতেই চমকে থমকে দাঁড়ালেন তিনি। " ক্যায়সে আপ জানে ? "পরক্ষণেই হেসে ফেলে বললেন,
"অরে হাঁ , আপ তো কেবল ক্রাইম
রাইটার নহি , ডিক্টেটার ভী হো। " পরক্ষণেই আমায় একটা
দোকানের পিছনে আলতো ভাবে টেনে নিয়ে বললে , " আপসে হোগা।
ম্যায় নিশ্চিত।" " অরে ক্যা হোগা ? ক্যা নিশ্চিত !
" আমি তো ভেবেই অস্থির। একেই তো জম্মু-কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ
জাভেদের সমস্যা , তার উপর গুলফাম স্যর । মরে গেল বাবা !
তবুও তার সঙ্গে সঙ্গে যেতেই হল। হেজি পেজি লোক নন গুলফাম স্যর।
জে এন্ড কে-র পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্তাব্যক্তি তিনি। বছর তিনেক আগে এই
শ্রীনগরেই তার সঙ্গে পরিচয় হয়। তখন হাজি বাবার এক ছকের ব্যাপারে আমায় আসতে হয়েছিল
। সেই সূত্রেই আলাপ হয়েছিল।
ডাল লেকের ধারে বুলেভার্ডে এসে যখন বসলাম , তখন
সন্ধ্যের সোনালী রোদে পিকচার পোস্টকার্ড মনে হচ্ছে চারিপাশটাকে। আমাদের চারিদিকে
টুরিস্টের ভীড় থিকথিক করছে। ডালের জলে তখন রঙিন ঝালর ঢাকা শিকারা গুলো ব্যস্ত
নৌকা বিহারে । স্থানীয় মানুষের হাতে ফুলের গোছা । ভেসে বেড়াচ্ছে কত কত দোকান। আর
জলের পিছনে থাকা হরি পর্বতের ওপার টপকে নেমে যাওয়া সূর্যের নরম লাল আলোয় সিনেমাটিক
পটভূমি, তার উপর আচমকা ডালের জলে ছিটকে এসে পড়ছে লাল রঙের ছিটে !
পটভূমি, তার উপর আচমকা ডালের জলে ছিটকে এসে পড়ছে লাল রঙের ছিটে !
একটা কফি হাউসের ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে গোল টেবিল ঘিরে
পাতা চেয়ার গুলোর একটা টেনে
বসে পড়লেন গুলফাম স্যর । অগত্যা আমাকেও বসে পড়তেই হল । কফি সার্ভ হওয়া পর্যন্ত গোমরা মুখে কী সব চিন্তা করছিলেন তিনি। কফির কাপে এক দু চুমুকের পর গলা ঝেড়ে কথা কয়ে উঠলেন গুলফাম স্যর , " প্রব্লেম ব্যানার্জ্জী প্রব্লেম। " তারপর তিনি যা বললেন তা সাজালে মোটামুটি এই রকম হয়।
বসে পড়লেন গুলফাম স্যর । অগত্যা আমাকেও বসে পড়তেই হল । কফি সার্ভ হওয়া পর্যন্ত গোমরা মুখে কী সব চিন্তা করছিলেন তিনি। কফির কাপে এক দু চুমুকের পর গলা ঝেড়ে কথা কয়ে উঠলেন গুলফাম স্যর , " প্রব্লেম ব্যানার্জ্জী প্রব্লেম। " তারপর তিনি যা বললেন তা সাজালে মোটামুটি এই রকম হয়।
এই শহরের 'পশ' এলাকা ওয়াজির
বাগে একের পর এক কুকুর গুম হয়ে যাচ্ছে , তাদের কোন খোঁজ
পাওয়া যাচ্ছে না। বড়লোকদের কুকুর । ক্রমে পুলিশ হয়ে ঘটনাটি এসে পড়ে স্পেশাল
ব্রাঞ্চে । অফিসাররাও হদিস না পেলে আসরে নেমে পড়েন খোদ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের
কর্তা গুলফাম হোসেন স্বয়ং ! আজ সকালে ঐ এলাকার একটি পোষা কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায়
পাওয়া গিয়েছে । পুলিশ কুকুরটির রক্ত পরীক্ষা করতে পাঠিয়েছে। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ
এলাকায় একটা দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে। পুলিশ কে দুর্গন্ধের উৎস সন্ধান করতে বলা
হয়েছে। এখনও অবধি আর কোনও খবর আসে নি।
আমার মুখের দিকে চেয়ে গম্ভীর মুখে জিজ্ঞাসা করলেন গুলফাম স্যর
,
" ক্যা হো সকতা হ্যায় ব্যানার্জ্জী ? " আমি ভ্যালভ্যালিয়ে চেয়ে রইলাম তার দিকে । সত্যি বলতে কি , আমি ঘটনাটার বিন্দু বিসর্গ কিসস্যু বুঝতে পারিনি। আচমকা গুলফাম স্যারের
পকেটে রাখা ওয়াকিটকির আওয়াজে দুজনেই চমকে উঠলাম। সেটাকে কানে তুলে শুনবার পর
কাশ্মীরী ভাষায় কাওকে কিছু নির্দেশ দিলেন বুঝলাম। একটু পরে একটা মারুতি জিপসি
নিঃশব্দে এসে দাঁড়লো আমাদের পাশ ঘেঁষে প্রায়।
আমার চোখে চোখ রেখে উনি আমায় বললেন , " চলিয়ে ব্যানার্জ্জী সাহাব স্পট ঘুমকে আয়ে। " বলেই সোজা গিয়ে বসলেন
গাড়িটাতে। অগত্যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়লাম ।
২
স্পটে পৌঁছাতেই গন্ধটা টের পাওয়া যাচ্ছিল ।একজন কনেষ্টবল
দৌড়ে এসে আমাদের দুজনকে দুটো অপারেশন থিয়েটারের মত মাস্ক বেঁধে দিয়ে গেল। দুর্গন্ধ
টা একটু কমল তাতে। আমাদের সামনে হিন্দি সিনেমার কাশ্মীরের মত একটা কাঠের বাংলো
বাড়ি । যেতে হল তাকে ঘুরে বাড়িটার পিছনে।
সেখানে দেখলাম একটা গর্ত ঘিরে পুলিশের মাস্ক পরা লোকজন হুমড়ি
খেয়ে পড়ে যেন কি দেখছে । কাছাকাছি গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমাদের দুজনের চক্ষুস্থির।
প্রায় চার পাঁচটা গলাপচা কুকুরের লাশ ! অর্থাৎ কেউ এদের মেরে পুঁতে ফেলেছে ।
ফরেনসিক এক্সপার্টদের লাশের স্যাম্পল নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
গুলফাম স্যার একটু দূরে তাদের সাথে কথাবার্তা বলছে । ভারী বাতাস ছেড়ে আমি সরে
এলাম। আমার মন বলছে , যে এটা করেছে , সে পুলিশের
আগমনে অবশ্যই বিচলিত হয়েছে এতক্ষণে।
হঠাৎ নজরে এল দুজন কনেষ্টবল বাংলোটার পিছনের ঘোরানো সিঁড়িতে বসে খৈনী ডলছে।
আমি তাদের কাছে এসে দাঁড়ালাম। উঠে পড়ে স্যালুট ঠুকল তারা। ভেবেছে বড় সাহেবের
সঙ্গে যখন এসেছি আমিও কেউকেটা। আমি ওদের নাম জিজ্ঞেস করতেই একজন বলল ফরহাদ খান , অপর
জন শিউচরণ সাহু । আমি বললাম , " খোঁজ নিতে পারবে,
এখানের কেয়ারটেকার বা অন্য কারুর মধ্যে কোনও ব্যস্ততা বা অস্বাভাবিক
আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছে কিনা ? "
দুজনেই স্যালুট
করে সেই যে উধাও হল আর দেখা নেই ! রাতের অন্ধকার নেমে এল গুলফাম স্যারের কথা শেষ
হতে হতে। চারিদিকের ঘরবাড়িতে তখন লাইট জ্বলে উঠেছে । আমি চিন্তিত অবস্থায়
দাঁড়িয়ে। আমার কাছে এসে গুলফাম স্যার হেসে বললেন , " সরি
ব্যানার্জ্জী , আপকা দের কর দিয়ে। " আমি হেসে বললুম ,
" কোই বাত নহি। " দুজনে গিয়ে উঠলাম জিপসীতে। গাড়ি স্টার্ট হতেই হইহই করে একটা লোককে টানতে টানতে নিয়ে এল ফরহাদ আর
শিউচরণ। এসে উত্তেজিত গলায় আমায় বললে , " এ স্যর ওহ আদমি
হ্যায় , মালিক কো কুছ না খবর করকে , আনন
ফানন মে ভাগ রহা থা।"
গুলফাম স্যারের চোখে দুর্বোধ্য জিজ্ঞাসা। আমি জিপসি থেকে নেমে পড়লাম।
লোকটার বয়স পঁয়ত্রিশ-এর মধ্যে । মুখে দাঁড়ি। কোটরাগত চোখে ধূর্ততা। নেশারু বোঝা
যায় । কাঁধে একটা ব্যাগ । আমি কড়া গলায় জিজ্ঞাসা করলাম , " কিউ ভাগ রহা থা ? " কিছু না বলে ঘাড়
গুঁজে নিরুত্তর দাঁড়িয়ে রইল । গুলফাম স্যার ও ততক্ষণে নেমে এসে দাঁড়িয়েছেন ।
অন্য অফিসাররাও এসে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ততক্ষণে ।
গুলফাম স্যার
ইতিমধ্যে শিউচরণ কে ডেকে জেনে নিয়েছেন ব্যাপারটা। প্রশংসার চোখে তাকালেন আমার দিকে।
মুখে পাশের অফিসার কে আদেশ করলেন কাশ্মীরীতে। লোকটাকে দুই অফিসার মিলে ধাক্কে নিয়ে
চলল কাছেই রাখা একটা গাড়ির দিকে।
৩
আমরা আবার
উঠে পড়তেই গাড়ি ছেড়ে দিল । আমরা আবার ফিরে এলাম শহরের প্রাণ কেন্দ্রে। আমায়
হোটেল আদুসে নামিয়ে দিয়ে গুলফাম স্যর পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দিকে চলে গেলেন।
হোটেলের রিসেপশনে পোঁছাতেই দেখলাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ
জাভেদ বসে রয়েছেন। সরি বলতেই উনি " মেনসন নট , মেনসন নট " বলে
উঠলেন।
আমরা এসে বসলাম
আমার ঘরে। আমার এই ঘরের চারপাশে সহসা কেউ আসতে পারবে না , সে
ব্যবস্থা করা আছে। ঘরের দরজা বন্ধ হতেই , উনি সোফায় বসে পড়ে
বললেন , " মিঃ ব্যানার্জ্জী , বিমান
বন্দরের লাউঞ্জ থেকে সর্বত্র ভাল করে পরীক্ষা করা হয়েছে , কিন্তু
সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায় নি। আমি স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইলাম ।
মিঃ জাভেদ
হঠাৎ বললেন , " মনে হল পুলিশের গাড়িতে ফিরলেন , কি ব্যাপার ? " উনাকে ঘটনাটা জানাতে হাসলেন ,
" গুলফাম হোসেন ? বেড়ে লোক ! "
তারপর উঠে পড়লেন। যাবার সময় বললেন , " আমি
কনটিন্যুয়াসলি ওয়াচ রাখতে বলেছি। " আমি গম্ভীর কণ্ঠে বললাম , "গুড।" উনি বিদায় নিলেন।
৪
হোটেলের লাউঞ্জে খেয়ে ফিরছি , হঠাৎ রিসেপশনের
মেয়েটার ডাকে ফিরলাম। " আপকা ফোন স্যর। " কুঞ্চিত কপালে ফোন ধরলাম। ওপার
থেকে গুলফাম স্যারের কথা শোনা গেল। জানালেন , লোকটা থার্ড
ডিগ্রীতেও কথা ছাড়েনি। স্পেশাল ব্রাঞ্চ ওর ছবি নিয়ে সব জেলাতে খোঁজ চালাচ্ছে ।
কিছু বেরোবেই । তবে পুলিশের কাছ থেকে একটা রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। সকালের কুকুরটার
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তার থেকেও অবাক ব্যাপার যে , যে রাসায়নিকটির উল্লেখ করা হয়েছে তা একমাত্র টিয়ার গ্যাসেই সুলভ !
আমার হৃৎপিণ্ডটা ধক্ করে উঠল। তোতলাতে
তোতলাতে শুধু এইটুকুই বলতে পারলাম , " লোকটার ব্যাগটা
কোথায় , ওটা রাখুন , আমি আসছি। "
আমি কোনরকমে রিসিভারটা মেয়েটির হাতে ফিরিয়ে দিয়ে হোটেলের সদর দরজার দিকে প্রায়
দৌড় লাগালুম । কী মনে হতে পিছু ফিরে দেখি মেয়েটি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে
রয়েছে।
আমি অনুমান
করেছিলাম লোকটা কিছুই বলবে না। ওর সমস্ত গোপনীয় সংবাদ সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে
নিশ্চয়। কিন্তু কোথায় ? পুলিশে ধরা পড়ার পর পেলেও পরবর্তী কালে যে
তাকে দীর্ঘ দিন অনুসরণ করা হবে এটা জানা কথা। অথচ তার কাজকর্ম অন্তত কাল ধরে
অপেক্ষা নিশ্চয় করবে না। অতএব এমন জায়গায় তা আছে , যা সুলভ।
তখনই আমার মাথায় আসে তার ব্যাগ। পুলিশ ক্যাজুয়ালি জিনিসই তাতে নিশ্চয় পেয়েছে ,
তাই তার উল্লেখ নেই। তবে , সেই ' তবেই ' আমার কাছে ব্যাগটার মূল্য বাড়িয়ে তুলেছিল।
স্পেশাল ব্রাঞ্চে পৌঁছে আমি ব্যাগটা শুধু তন্ন
তন্ন করে তল্লাসিই নিই নি , একজন দর্জি কে ডাকিয়ে ব্যাগটাকে পার্ট বাই
পার্ট খুলে তল্লাশী চালাতেই বেরিয়ে পড়ে ক্যানভাসে আঁকা এই মানচিত্রের টুকরোটা।
দুজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে যিনি ঢুকলেন তাকে আলাদা করে সেনা বাহিনীর লোক বলে
উল্লেখ করবার দরকার হয় না।
৫
এখন
রাত প্রায় তিনটে , আমরা চলে এসেছি শ্রীনগর এয়ারপোর্টে। লাফ দিয়ে
নেমেই আমি আর গুলফাম স্যার বাঘের মত দৌড়াতে শুরু করলাম লাউঞ্জের দিকে। আসে পাশে থাকা সেন্ট্রি , লোকজন
দুজন কে পুলিশের জিপসি থেকে ঐ ভাবে লাফিয়ে পড়ে দৌড়াতে দেখে সন্ত্রস্ত চোখে চাইতে
লাগল ।দুজনে ভ্রুক্ষেপ না করে লাউঞ্জে ঢুকে পড়লাম। গুলফাম স্যার বা হাত বেছে নিয়ে
কেবল বললেন , " আপ উস তরফ দেখিয়ে।"
কিন্তু কোথায় কি , কিচ্ছু নেই। দুজনে হতাশায় চুর হয়ে ফিরে আসছি।
এক্সপার্ট পুরো ম্যাপটার জায়গা গুলোর নাম বের করে ফেলেছিল আধঘণ্টায়। যেই দেখেছি
এয়ারপোর্টের নাম , আমি সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মিঃ
জাভেদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের কাছে পাক্কা খবর আছে , কোন
এক সন্ত্রাসবাদী দল শ্রীনগরের বিমান বন্দরে হামলার ছক করছে। এবং ডি-ডে আসন্ন।
হতাশায়
ফিরে আসছি , হঠাৎ চোখ পড়ল কফি কর্নারের দিকে। এক কাপ হলে মন্দ হয় না।
আমি হঠাৎ পথ বদলে সেই দিকে এগোতে গুলফাম স্যারের চোখে দুর্বোধ্যতার ছায়া ঘনাল। আমি
নীরস গলায় বললাম , " এক এক কাপ কফি হো জায় ? " উনি
মাথা নাড়লেন হ্যাঁ-য়ে। দুজনে এগিয়ে গেলাম।
কফি
নিয়ে চুমুক দিতে দিতে আমি চারিপাশটায় নজর বুলাতে লাগলাম। দূরে কাউন্টারে লোকেদের
কিউ। ওপাশে একগাদা খালি ট্রলি একত্র করে রাখা। আমাদের বা দিকে কিছু বসবার বেঞ্চ।
আর তার অনতি দূরে ' ইউজ মি ' পেঙ্গুইন
পাখির আদলে ডাষ্টবিন। বেঞ্চিতে দু তিন জন যাত্রী অঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমন্ত যাত্রীদের
দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা কথা মনে উঁকি মারল। কিন্তু তা হবে কি ?
হঠাৎ
আমায় আধা কফির কাপ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে দেখে অবাক হলেন গুলফাম স্যার । আমার তখন
সেদিকে মন দেবার অবসর নেই। ছুটে গিয়ে দুহাতে পাগলের মত নাড়িয়ে চলেছি এক এক যাত্রী
কে ঘুম ভাঙ্গাতে। গুলফাম স্যার চেঁচিয়ে বললেন , " আপ ক্যা
পাগলা গয়ে ব্যানার্জ্জী সাহব ? "
আমি
ততোক্ষণে বুঝে গিয়েছি এ কি ঘুম ! আমার চিৎকারে ছুটে এলেন মিঃ জাভেদ। চারিদিকে
স্পেশাল ব্রাঞ্চ আর এ ন আই-এর লোকজনে পূর্ণ হয়ে গিয়েছে জায়গাটা। এরা সবাই চব্বিশ
ঘণ্টা ডিউটিতে ছিল। আমার কথায় ডাস্টবিন টা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দূরে। ওতে
ডিসপোজাল টিয়ার গ্যাস সেলের রাশ কফির ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক ও কাগজের গ্লাসের তলায়।
আর তার রাসায়নিক বিক্রিয় গ্যাসেই যে আসলে উগ্রবাদীদের হামলার ছক , এটা
একেবারে হতবিমূঢ় করে দিয়েছে জে এন্ড কে-র প্রশাসনের ইন্টেলিজেন্স কে। বিমান বন্দর
ছাড়ার সময় পাশে এসে গুলফাম স্যার কৃতজ্ঞ গলায় সমস্ত কাশ্মীরের হয়ে যেন তার সেই
স্বভাব সুলভ নম্র স্বরে বললেন , " ধন্যবাদ ব্যানার্জ্জী
সাহব। " আমি তার দিকে উচ্ছ্বসিত দৃষ্টিতে শুধু তাকালাম।
কোন মন্তব্য নেই