দ্য আর্দেন ফ্লুট — প্রাচ্যের মায়াধ্যান
হাওয়াকল
প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত কিরীটী সেনগুপ্ত-র সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ " দ্য
আর্দেন ফ্লুট"-এর পাঠ প্রতিক্রিয়ায় বিশিষ্ট কবি বিভাস রায়চৌধুরী জানিয়েছিলেন, "ইংরেজি কবিতায় সে
(কিরীটী) যোগ করেছে প্রাচ্যের মায়াধ্যান। বারংবার পাঠযোগ্য তার কবিতা অনেক দূর
যাবে।" আর আজ কবি শাশ্বত কর-এর অভিনব পাঠ অভিজ্ঞতা কবি বিভাসের পর্যবেক্ষণকেই
প্রতিষ্ঠিত করল।
কিরীটীবাবু,
সকালে
উঠে পড়লাম আপনার বইটা। সত্যিই নামাঙ্কন সার্থক। মাটি মায়ের সুর যে আপনি শুনতে পান, সে বেশ বোঝা যায়। চরাচর জুড়ে যে
ছন্দময়তা চলে, আমার-আপনার স্থূল চোখে যেখানে কোনও ঘটনায় জগৎ
কালো হয়ে যায়, আদতে যে সে সুবিশাল শৃঙ্খলার কিছু যায় আসেনা,
সেই সুর যে আপনিই বাজে- আপনার লেখা জুড়ে তা বেশ স্পষ্ট। বিভিন্ন
চিত্রকল্পে, বোধগম্য রূপকের মধ্য দিয়ে আমার কাছে তো সেই
চিরন্তন সুরটাই আপনার বই থেকে ভেসে এলো। সকাল, সকাল হল।
ধ্যান
অতি সুগভীর অভিজ্ঞতা। বেশ কয়েকবার সেই অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। আমি তো সাধারণতম কণা।
তবু তাও যে নই, সেই অনুভবটা তখন বড় বেশি করে আসে। খানিকক্ষণের জন্য হলেও বয়ে যেতে পারি
ঢেউয়ের মাথায় সাদা ফেনা হয়ে। তারপর আবার কখন নেমে আসি বাঁচা, মরা, খাওয়া, শোওয়ার জগতে।
কাজেই সেই অনুভব কাগজে লেখা আর হয়ে ওঠে না। শব্দ খুঁজে পাই না। আপনি আপনার মতো
পেরেছেন। এই বা ক’জন পারে? আপনাকে তাই অভিনন্দন।
একজন
লেখকের তাঁর মত কিছু দর্শন থাকে। আপনারও আছে। লেখায় তা স্পষ্ট। চাতুর্য চোখে আসে
না। বরং সহজভাবে চিন্তাটা দেখতে পাওয়া যায়। কবিতায় ব্যবহৃত মা, মাতৃগর্ভ, শাশ্বতভাব, সপ্তম স্বর্গ, যম,
চাঁদ, কাজলদিঘি- শব্দগুলো নিজের মত করে বুঝতে
পারি। ছবিটা ভেসে ওঠে। শব্দ চয়ন, শব্দ বিন্যাস এ নিয়ে বলবার
আমি কেউ নই। বললামও না। কেবল যে ভাব অক্ষর বেয়ে আমায় ছুঁল, তার
কথাই বললাম।
যখন
লেখেন, "no
sorrows any more, nor a hint of delight/ A wonderful world opens up deep
inside", ভারতীয়
দর্শন ভেসে ওঠে, উপনিষদ এর বাণী পুনরুচ্চারিত হতে শুনি। এই
তো আমাদের সম্পদ, আমাদের ঐতিহ্য নয় মজ্জা। কোডনে কোডনে মিশে
আছে সেই সুর। শুনতে হলে প্রয়োজন শুধু চোখ বন্ধ করে দেখবার অভ্যাস।
মাটির
বাঁশির সনাতন সুর আবার ছুঁয়ে যাক সবাইকে। সেই সুপ্রাচীন দর্শনের শরণাগত হিসেবে এই
প্রার্থনা।
ভালো
থাকুন,
শাশ্বত
কর
৫ই জুন, ২০১৬
শময়িতা, বেলঘরিয়া
কোন মন্তব্য নেই