শান্তিরামের চা-এ হন্তারক এবং কয়েকটি কথায় কিরীটী সেনগুপ্ত
জানুয়ারি ২০১৬-র শুরুতেই প্রকাশিত হবে লেখক বিতান চক্রবর্তীর সাতটি ছোট-গল্পের
সংকলন শান্তিরামের চা। প্রকাশকঃ শাম্ভবী।প্রচ্ছদঃ
তমোজিৎ ভট্টাচার্য। সাতটির অন্যতম হন্তারক সম্পর্কে দু-কথা লিখলেন কিরীটী সেনগুপ্ত।
থ্রিলার নয়। থ্রিলিং। আপনাদের কেউ যদি রবিবারের চন্দ্রকান্তা ধারাবাহিকটি দেখে
থাকেন (এখন আর দেখায় না, মনে হয়), তাহলে বলি ফারসি हैरतअंगेज़ (হ্যায়রতঙ্গেজ) শব্দটি
প্রথম শুনি ওখানেই। তখন শব্দটির অর্থ জানতুম না। পরে জেনেছি — চাঞ্চল্যকর, বিস্ময়কর,
বা রোমহর্ষক। বিতান চক্রবর্তীর "হন্তারক" এমনই এক গা-ছমছমে মনোজাগতিক শর্ট
ড্রাইভ।
প্রচলিত গানের লাইন
বিকৃত করে গাওয়ার পুরনো অভ্যেস আমার। বহু পুরনো অভ্যেস। কবিতা কৃষ্ণমূর্তির কন্ঠে
ওই বিখ্যাত গানটি — নিম্বুরা নিম্বুরা
নিম্বুরা! মনে পড়ছে? এহেন গানটির কথা আমার গলায় যে শুনেছেন তিনিই হেসেছেন। কেউ কেউ
তো বলেছেন, কিরীটী, গাইতে হলে ঠিক ভাবে গাও। বিকৃত কর না। কী বলি!! আমাদের সমাজ তো
এখনও সমকামিতাকে মস্তিষ্ক বিকৃতির আখ্যা দিয়ে থাকে। তা সে যতই গর্বিত হাঁটাচলা
(পড়ুন, প্রাইড ওয়াক) হোক না কেন।
গল্পকার বিতান
চক্রবর্তী ওঁর "হন্তারক" গল্পটিতে সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন এই
"বিকৃতি"-কে। গল্পটির মূল চরিত্রে এক বেকার যুবক। নাম-হীন। চাকরির জন্যে
ইন্টার্ভিউ টেবিলে। আর পাঁচটি ইন্টার্ভিউ রুমের মতো নয়। লেখকের কথায়, "ভেতরে
একটা নীল আলো ঘরময় ছড়িয়ে আছে ... আমার ঠিক উলটো দিকে যিনি বসে আছেন তাঁর নাম আমি
জানি না। জানতে ইচ্ছেও করল না। আলোতে মানুষকে অবয়ব মনে হয়, আমি দেখেছি।"
ইন্টারভিউয়ার সম্পর্কে
যুবকটির পর্যবেক্ষণ তারিফে কাবিল— "...উনি কেবলই
প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। এমন ভাব যেন উত্তর শোনার কোনও বাসনাই ওনার নেই। কিন্তু
প্রতিটি উত্তরই উনি মন দিয়ে শুনছেন।"
চাকুরি-প্রার্থী এই
যুবককে ছেলেমানুষ বলাই যায়। নয়তো ইন্টারভিউয়ারের সামনে বসে তার দুষ্টুমি করার
ইচ্ছে জাগে? জিজ্ঞাসা করা হল, "আপনার প্রিয় কাজ?" তার উত্তরও এলো চটপট।
"কবিতার লাইন পালটে ফেলা।" দেখুন, লেখক বিতান "বিকৃতি"-র পাশ
না-মাড়িয়ে লিখেছেন, "...পালটে ফেলা।" অনেকটা সেই "উলটে দেখুন,
পালটে গেছে"-র মতো। আর উদাহরণ হিসেবেও তুলে দিলেন খাসা একটি লাইন— "...বৃষ্টি পড়ুক এখানে বারোমাস/ এখানেও মেঘ গাভির মতন
চড়ুক..."
"হন্তারক"
কোনো বেকার যুবকের লড়াইয়ের গল্প নয়। কোনোভাবেই নয়। লাইফ স্ট্রাগলের কাহিনী নয়।
খেতে না-পাওয়ার আলেখ্য নয়। একটি বেকার ছেলের কল্পনা, জাগতিক অবস্থান, সমাজ চেতনা,
ইচ্ছে-অনিচ্ছের টানাপড়েন, কবিতা-মাখামাখি অস্তিত্বের নাতিদীর্ঘ, গভীর
মনস্তাত্ত্বিক হিসেব। যে হিসেবের একদিকে এক নির্মোহ পর্যবেক্ষক-তথা-লেখক, আর অপর
দিকে অবচেতনের চৈতন্যে জেগে-থাকা কোনো এক যুবক।
প্রিভিউ হিসেবে 'হন্তারক' গল্পটিকে বেছে নেওয়ার কারণ বোঝা গেল। আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। 'শান্তিরাম'কে কাল্টিভেট করতে হবে মনে হচ্ছে। বইটি প্রকাশিত হলে এই পত্রিকায় যেন লিংক/ সাকিন- ঠিকানা দেওয়া হয়। প্রিভিউ প্রকাশ যারা করলেন, তাঁদের কাছে এইটুকু দাবী করতেই পারি।
উত্তরমুছুননিশ্চয়ই, অতনু। লিংক, এবং অন্যান্য তথ্য দেওয়া হবে। ধন্যবাদ, ভাই।
উত্তরমুছুনবই প্রকাশের পর পাঠকের আগ্রহ অনুসারে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। @ Atabu Deb.
উত্তরমুছুনMaf chaichhi engreji hotofe bangla lekhar jonno. prothomei boli kiriti dar kolyane golpogulor samanyo dharona jobe thekei peyechhi tobe thrkei ekebare mukhiye achhi boi ti haate pabar jonno. ar sei agroher mukute aj aro ekti palok jog holo ei preview ti pore..onek shubhechchha roilo..doya kore ar besi din obhukto rakhben na plzzz
উত্তরমুছুনউল্লেখ্য গল্পের ইন্টারভিউআর এর ভূমিকায় খুব শিগগির পাঠকেরা থাকবে। আর গল্পকার তার অন্তর্বর্তী মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি তে এবারো থাকবে প্রার্থী হয়ে। চাকরিপ্রার্থী নয়, চেনা প্রার্থী হয়ে।
উত্তরমুছুনমুখিয়ে রয়েছি বই টি হাতে পাবার আশায়। 'হন্তারক'এর মত বাকি গল্পগুলো যেন আজ ই পরে ফেলতে পারলে ভাল হতো বলে বধ হয়।
পড়ার আগ্রহ আরও জোরদার হল। অপেক্ষায় থাকলাম। শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুন