Header Ads

1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5
1 / 5

Healing Waters Floating Lamps : একটি পাঠপ্রতিক্রিয়া

কবি কিরীটি সেনগুপ্ত-র সাম্প্রতিক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ Healing Waters Floating Lamps-এর একটি অভূতপূর্ব পাঠপ্রতিক্রিয়া চিঠিতে লিখে জানালেন কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়।


প্রিয় কিরীটি-দা,                                        ১৫/০৬/২০১৫, মেদিনীপুর।

মেদিনীপুরের মফসসলে বসে প্রথমেই তোমার সাম্প্রতিক বইয়ের বারান্দার একটি কথা মনে এল। হ্যাঁ, ডন মার্টিন ঠিকই বলেছেন, ডাঃ সেনগুপ্ত, আপনার কাজ সত্যিই ভারতীয় সংস্কৃতি আর আধ্যাত্মবাদের মৌল উপাদানগুলি সুচারু ভাবে ধারণ করে আছে। Healing-এর এক অর্থ যদি আরোগ্য হয়, তবে বলা বাহুল্য সেই পুণ্য জলস্রোতে তোমার ভাসমান কবিতাগুলি আমাদের এক পবিত্র শান্তির দেশে নিয়ে যেতে পেরেছে। আকাশে পৌঁছে মহাসমুদ্রের অবগাহন-এ স্বাদ, শুধু ভালো লাগা বললে, তা অনেক কম বলা হবে, বরং ওই যে শান্তির কথা বললাম, এ জিনিস সেই; আনন্দরূপ অমৃত! তোমার বইয়ের সূচনার অন্তত চারটি কবিতায় জলের অনুষঙ্গ পাঠককে সে অমৃতধারায় স্নাত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি জানি, জল ছাড়াও, কবিতায় চোখের ব্যবহার খুব প্রিয় বিষয় তোমার, যা জলের মতোই ঘুরে-ঘুরে অদ্ভুত এক আবেশ তৈরি করে, দৃষ্টির এক অন্যরকম বিস্তার ঘটায়, তুমি যোগীর চোখ দেখতে পাও, জীবনানন্দের পাখির নীড়ের চোখ, যেন ধ্যান হয়ে প্রাণের সঙ্গে প্রকৃতির সংযোগ রচিত হয় এইসব অক্ষরে এসে। হয়ত এই যাত্রা নিরূপম, নিঃসঙ্গ যূথজীবনের দিকে হেঁটে চলা, সেখানে  রঙের সংকেত কোথাও নেলসন ম্যাণ্ডেলার এক টুকরো কালো রঙের জমি, আবার কোথাও ক্যামেরার দর্পণ ছুঁয়ে গেছে নিষ্পাপ সভ্যতার মুখ। একটি কল্পচিত্র এপ্রসঙ্গে তুলে দিতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু চিঠিতে উদ্ধৃতি, সে আমার খুব একটা পছন্দ নয়, তবু যদি উপমাই কবিত্ব হয়, তাহলে তোমার মায়ের হাতের ঘি এবং তারও আগে পায়াস বিশেষণ, এক অনবদ্য দ্যোতনা এনেছে কবিতায়! সত্যিই তো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পী আমাদের মা-ই পারেন দুধের উপর থেকে অবশিষ্ট দানাকে স্বর্গসমান করে তুলে এমন অতুলনীয় রূপ দান করতে। কবিতার মতোই সে স্মৃতি সজীব, অক্ষয়।


ফিশ-লিপ নামে একটি কবিতায় তোমার প্রথম দু-ছত্র এরকমঃ আই হ্যাভ রেড মরফোলজি অফ দ্য ফিশ লিপ/গিভস হিন্ট অফ দ্য ওয়াটার কালার ডিপ”— এ কবিতাটি যেন একটি গান, স্থায়ী অংশের পরে অন্তরা, যেখানে আমার ঘরের কোনায় অ্যাকোয়ারিয়াম এ পর্যন্ত যে দৃশ্যের জন্ম হয়, তা তো স্বাভাবিকই, কিন্তু ওই যে শেষছত্রে যেখানে রঙ নেই, জল যেন শুধু জল, পাঠকের কাছে নিঃশব্দ হয়ে পড়ে আছে এই অংশ আমাকে কোথাও যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে এলিয়টের দ্য ওয়েস্ট ল্যাণ্ড(The Waste Land)-এর কথাঃ এখানে কোথাও জল নেই, শুধু পাথর! পাথর আর জল নেই, শুধু বালির পথ হয়ে যায় *। কী ভয়ঙ্কর লিখেছ তুমিঃ মাই লিপস আর থিন/ নো ট্রেস অফ কালার, বাট ওয়াটার

এরকম প্রতিতুলনা অবশ্য মনকে ভাবনা এনে দেবে আরও, তোমার দ্য অড নাম্বার আমাকে সার্ত্র-র বিবমিষা গল্পের সঙ্গে সমযোজী করে কবিতা পড়িয়ে নেবে। তবু যেন তাও না, সপ্রিতভ দ্য সান, গিভ মি মোর অফ লাইফ অথবা সিনস টাইম আননোন কবিতাগুলির উচ্চারণ রূপ আরোপের এক সহজ ঘোর তৈরি করে নেয়। জলের ভিতর প্রতিমার মুখ, বিসর্জনের পরে ভেসে থাকা শোলা, চাঁদমালা, মুকুট নদীও যে গর্ভিণী হয় এ কল্পনার পেছনে যে অনুভবী মন এতক্ষণে যেন Healing-এর অর্থ আমার কাছে খুলে দিল। ডন মার্টিন যথার্থ বলেছেনঃ পারহ্যাপস দ্য ফাইনাল আয়রণি অফ হিলিং ওয়াটারস  ফ্লোটিং ল্যাম্পস” ইস দ্য ফিসিক্যাল নেচার অফ দ্য বুক ইটসেলফ। প্রকৃতির সঙ্গে মানবপ্রকৃতির এই শিহরণ, আশ্চর্য একজন কবির কাছেই এভাবে ধরা দেয়।

পরিশেষে একটি কথা। কবিতার সঙ্গে তার পাশে-পাশে রাখা ছবিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কবিতাপাঠে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।

আর কী? ভালো থাকা চাই, ভালো রাখা চাই। হ্যাঁ কবিতায়, সকলকে!

নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়



*কিরীটিদা, ভাষান্তর আমার করা।
        





৩টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.